ভালোবাসা কারে কয়? এ এক উত্তরহীন প্রশ্ন। এক পরিচিত প্রেমিক বন্ধুর মুখে সেদিন শুনলাম আক্ষেপ, “এর চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো।” উল্লেখ্য, সে গত তিন বছর ধরে ভালোবাসার আবেগে আবদ্ধ হয়ে আছে এক প্রেমিকের সাথে।
দিন নেই রাত নেই তাকে নিয়েই তার ভাবনা। তার প্রশ্ন- কেন যে এ সম্পর্কে জড়াতে গেলাম!
নাহ, এই জীবনটা একেবারেই উলটপালট হয়ে গেল। তাকে জবাব দিলাম, পৃথিবীর সব প্রেমিক এ উপলব্ধির জন্যই ভালোবাসে।
আর যখন সে এ উপলব্ধির জন্য ভালোবাসায় জড়িয়ে যায়, তখন সে আর ওখান থেকে বের হতে পারে না, হারিয়ে যায় সে অন্য কোনো জগতে।
আসলে পৃথিবীর সব প্রেমিকই অন্যকে উপদেশ দেয়, কখনো কাউকে ভালোবাসতে যেওনা, আমি যে কি ভুল করেছি! সে ভুল আর কেউ করো না। জবাবে উপদেশপ্রাপ্ত বন্ধু বলে, আমিও আমার প্রেমিকের এক বন্ধুকে এ উপদেশ দিয়েছি।
ব্যাপারটা অনেকটা সেই বিখ্যাত কৌতুকের মতো। মৃত্যুপথযাত্রী পিতা মৃত্যুশয্যায় ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছেন, বাবা কোনদিন বিয়ে করবি না।
জবাবে ছেলে বলছে, জ্বি বাবা, আমিও আমার ছেলেকে এ উপদেশ দিয়ে যাব। আবার কেউ কেই বলে থাকেন- ‘বিয়ে হচ্ছে পাবলিক টয়লেটের মতো, যে ভেতরে আছে সে বের হবার জন্য ছটফট করে, আর যে বাইরে আছে সে ভেতরে যাওয়ার জন্য ছটফট করে।’
এই হচ্ছে ভালোবাসা বা বিয়ে। ভালোবাসা এক চিরকালীন আক্ষেপের নাম। যে পেয়েছে সে ভাবে এটা না পেলেও কি যায় আসে।
আর যে পায়নি সে ভাবে আহা! কি হল এ জীবনে? বিবর্ণ মরুভুুমি, ভালোবাসাহীন মৃত বালুচর।
তারপরও এ কুহেলিকার পেছনে মানুষের কি অন্তহীন যাত্রা।
রাজপ্রাসাদের বাসিন্দা থেকে শুরু করে রাস্তার মানুষেরও এক অমোঘ আকর্ষণ।
একই অনুভূতি। তোমার জন্য জীবন দিতে পারি। হতে পারি সর্বস্বত্যাগী। কিছুই চাইনা শুধু তোমাকে চাই। সারা পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও তোমাকে চাই।
এই এক অনুভবের কাছে পৃথিবীর বাকি সব অনুভূতি তুচ্ছ। এইতো সেদিনও জাপানের রাজকুমারী তার ভবিষ্যত রাজপদ ত্যাগ করলেন এক সাধারণ যুবকের টানে। এখন তো রাজপরিবার নামমাত্র।
কিন্তু যখন রাজাই ছিলেন একটি দেশের ভাগ্যবিধাতা, সর্বেসর্বা– তখনকার ইতিহাসও তো এই ভালোবাসারই জয়গানে ভরা।
কেন, আমরা কি ব্রিটিশ সম্রাট অস্টম এডওয়ার্ড-এর কথা জানি না? এক সাধারণ তরুণীর জন্য রাজপদ ত্যাগ করে দেশান্তরী হলেন যিনি।
এ রকম হাজারো ঘটনা-দুর্ঘটনায় ভরপুর ভালোবাসার ইতিহাস। ভালোবাসার জন্য প্রাণদান তো এক নৈমিত্তিক ঘটনা।
“তোমাকে পাইনি, কি হবে এ জীবন রেখে।” যেন পৃথিবীতে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভালোবাসার অনুসন্ধান। সেটাই যখন পাওয়া গেল না তখন আর এ জীবনের মূল্য কি?
ভালোবাসা নিয়ে এরকম আলোচনা আরো শত পৃষ্ঠা ধরে চলতে পারে।
তাতেও ভালোবাসার অমোঘ রহস্যভেদ সম্ভব নয়। আসলেই কি তাই? সত্যিই কি সম্ভব নয় ভালোবাসার রহস্যভেদ?
আমরা কি কখনোই জানতে পারব না কেন আমরা এ রকম? কেন আমাদের মনের মধ্যে আবেগের এ অলঙ্ঘ্য আনাগোনা?
তাহলে কি অজানাই থেকে যাবে ভালোবাসার রহস্য? না, তা নয়। ভালোবাসা অজানা নয়। অন্তত পুরোপুরি অজানা নয়। এখন ভালোবাসার অনেক কিছুই জানি আমরা।
জানি, কেন আমরা হাজারো চেহারার ভিড়ে কেবল একটি চেহারায় নিজের সকল আকাক্সক্ষার প্লাবন বইয়ে দিই।
শত শত মানুষের ভিড়ে কেন কেবল একজনকে আমাদের ভালো লাগে, কাছে পেতে ইচ্ছে করে।
একগাদা বন্ধুর মধ্যে একই সাথে কিভাবে কেউ কেউ কেবল ফ্রেন্ড, আর শুধু একজনই হয় মনের মানুষ বা ভালোবাসার মানুষ।
অনেকগুলো ভালোলাগার মানুষের মধ্য থেকে কেন সারা জীবন কেবল একজনকে নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হই আমরা ‘বিয়ে’ নামক এক সামাজিক প্রথার মাধ্যমে।
এসব কিছুর এখন বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা আমাদের হাতে আছে।
সুতরাং পুরোপুরি অজানা নয় ভালোবাসা।
আসলে এটা মহান সৃষ্টিকর্তার এক অশেষ কৃপার ফসল। এখানে রয়েছে এক রহস্যের আধার। যার কারণে মানুষ ভালোবাসে, সংসারধর্ম পালন করে জীবন কাটিয়ে পাড়ি জমায় পরপারের অনন্ত যাত্রায়।