কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়লে চলবে না, পুনরায় চেষ্টা করতে হবে। সবসময় ইতিবাচক মানসিকতার অনুশীলন করে ইতিবাচক মানুষদের সাহচর্য বজায় রাখতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে। অধ্যবসায়, বিজ্ঞ মন্ত্রণাদাতা, আত্মবিশ্বাস এরূপ অন্তত দশটি বিষয়ে নিজের দৃঢ়তাকে মজবুত ও অনুসরণ করতে পারলে নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যেতে পারেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। এই কৌ্শলগুলো হলোঃ
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনার জোর অনেক বেশি।’ তাই আপনার লক্ষ্যকে স্বপ্নে পরিণত করুন। অর্থাৎ আপনি যা হতে চান, তার ছবি যদি স্পস্টভাবে দেখেন, তা হলে তার বাস্তবায়ন সহজ হয়। আপনার সমস্ত মনোযোগ থাকবে ছবিটার দিকে। দিনে-রাতে যখনই সময় পাবেন, তখনই আপনার স্বপ্নের কথা ভাবুন। মনের আঙিনায় স্বপ্নটাকে একেবারে স্পষ্ট করে ফেলুন। যাতে স্বপ্নের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আপনি বাস্তবেও নিজেকে সার্থক হিসেবে দেখতে পান। যতো বাধাই আসুক, আপনি পৌঁছে যাবেন স্বপ্নলোকের সেই রাজপ্রাসাদে।
আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি না যে, আসলে আমরা কী চাই। বা কোনো চাওয়া নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সন্তুষ্টিও অর্জন করতে পারি না। কোনো কাজের লক্ষ্য হতে হবে আপনার একান্ত কাম্য বা গভীর আগ্রহের বস্তু। এই লক্ষ্যই সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছুতে সহায়তা করবে। তাই আপনার লক্ষ্যকে মনের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করুন।
৩। মেধা যাচাইঃ
ধরুন, আপনি লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। ধরেই নিন আপনি সফল। এরপর কী করা উচিত? আপনি কি বসে থাকবেন? তা হলে আপনি ভুল করবেন। কারণ, সাফল্যের শেষ নেই। সাফল্যের একটা সিঁড়ি অতিক্রম করার পর আপনি আরেকটা সিঁড়িতে পা দেবেন। কারণ, আপনার মেধার কোনো কমতি নেই। লক্ষ্য অর্জনে মানুষের ক্ষমতার কোনো শেষ নেই। তাই নিজের মেধা যাচাই করুন।
৪। সুনিশ্চিত পরিকল্পনাঃ
সফলতা অর্জনের জন্য চাই সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যাকে আমরা অন্য কথায় নকঁশা বা মানচিত্রও বলতে পারি। এটি ছাড়া আপনি সফল হতে পারবেন না। আপনার বর্তমান অবস্থান ও আপনার কাঙ্ক্ষিত গোলের অবস্থানের দূরত্বটা মাথায় রাখুন। এর মাঝে কিছু বাধা আসতে পারে। বাধাগুলোকে চিহ্নিত করুন। বাধাগুলো দূর করার উপায় বের করুন। ধরুন, আপনি প্রকৌশলী হতে চান। আপনার পরিকল্পনা হতে হবে প্রকৌশলী হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া, প্রকৌশলী হতে ঠিক কতটা সময় লাগবে, তা একটি বড় বিষয়। মনে করুন, একজন প্রকৌশলী হতে আপনার পাঁচ বছর সময় লাগবে, পুরো সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগান। এ ক্ষেত্রে সময়কে ভাগ করে নিতে পারেন এবং সে অনুযায়ী এগোতে পারেন।
৫। আত্মবিশ্বাসঃ
সফলতার যদি কোনো অন্তরায় থাকে, তা হলে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। কেউ যদি ভাবে, ‘আমি পারবো না’ ব্যস! নিশ্চিতভাবে সে ব্যর্থ। কারণ, সে চেষ্টা করে না বা চেষ্টা করার আগেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাসের মাত্রা হতে হয় খুব দৃঢ়। যদি মনে বিশ্বাস থাকে অটুট, লক্ষ্য যতোই কঠিন হোক না কেন বিজয় নিশ্চিত। কখনোই বিশ্বাস হারাবেন না। তা হলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যাবে। ফলে উত্সাহ-উদ্দীপনা কমে যাবে। কাজেই, বিশ্বাস ধরে রাখুন। নিজের মাঝে নিজেই প্রতিষ্ঠিত করুন যে, ‘আমি পারবোই।
৬। ইতিবাচক মনোভাবঃ
আপনার লক্ষ্যের প্রতি থাকা চাই আপনার ইতিবাচক মনোভাব। এই মনোভাব আপনাকে সাফল্যের দিকে টানবে। যাদের কোনো কাজে মন নেই বা নেতিবাচক মনোভাব আছে, তারা সফলতার মুখ দেখতে পান না। ইতিবাচক মনোভাব হচ্ছে আশা, সৃষ্টিশীলতা আর প্রাপ্তির সীমাহীন সম্ভাবনা। যারা নেতিবাচক চিন্তা করেন, তারা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করুন। কোনো কাজকে পজেটিভ ভাবুন। একান্ত নিজের করে নিন, যদি দ্রুত পজেটিভ না হতে পারেন, তবে আস্তে আস্তে ইতিবাচক মনোভাব অর্জন করুন।
৭। সক্রিয় কর্মতত্পরতাঃ
দক্ষতা বর্তমান কালে সফলতার অন্যতম নিয়ামক। দক্ষতা ও কর্মতত্পরতার মাঝে সামান্য পার্থক্য আছে। কর্মতত্পরতা হচ্ছে কাজটি সঠিকভাবে করে ফেলা, আর দক্ষতা হলো নিপুণভাবে কাজ করা। মোট কথা, সফল হতে চাইলে দুটোরই প্রয়োজন আছে। অর্থাত্ সফল হতে আপনাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে তত্পর হতে হবে।
৮। সময়ের সঠিক ব্যবহারঃ
অনেক ক্ষেত্রে আমরা আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখি। আমাদের টনক না নড়া পর্যন্ত এই কাজটি আমরা বারবার করি। কিন্তু সময় তো আর বসে থাকে না। আমাদের খেয়াল হতে হতে অনেক সময়ের অবমূল্যায়নের ফলে জীবনে নেমে আসে হতাশা আর জীবন সম্পর্কে অনীহা। আপনাকে মনে রাখতে হবে, সফলতার জন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ, সাফল্যের জন্য আপনাকে শিখতে হবে অনেক কিছু। সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে সময়কে ভাগ করে নিন।
৯। মানুষের সাথে যোগাযোগঃ
বর্তমান সময়ে যোগাযোগের গুরুত্ব অনেক। আর বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। তাই মানুষের সাথে সম্পর্ক একটা বড় বিষয়। মানুষ কখনোই একা চলতে পারে না। মানুষের বেঁচে থাকা, মানুষের চলাফেরা, কর্ম, সফলতা—সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো না কোনো মানুষ কিছুটা হলেও প্রভাবিত করছে। তাই প্রয়োজন সম্পর্ক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্যের সাথে ইতিবাচক বা হ্যাঁ-বোধক আলোচনা, কথাবার্তায় সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার, অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা, কথায় ও কাজে মিল রাখা, মানুষের সাথে মেশা এবং তাদের জানা, মানুষের সঠিক মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয় চর্চার মাধ্যমে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
১০। ধৈর্য ও মানসিক প্রশান্তিঃ
যদি সফল হতে চান, তা হলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে এবং কাজে মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে হবে। ধৈর্যশীলতা আপনাকে নতুন কাজের আগ্রহ জন্ম দেবে এবং প্রশান্তি বজায় থাকলে আপনি কাজটিকে আপনার একঘেঁয়ে মনে হবে না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসতেই পারে, হাল ছাড়বেন না। ধৈর্য নিয়ে চেষ্টা করে যান। মনোবল নিয়ে কাজে নামুন। আমরা যদি মহাজ্ঞানীদের কথা ভাবি, নিউটনের কথাই ধরুন, যার গবেষণার সব কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। নিউটন হাল ছাড়েননি। এডিসন অসংখ্য চেষ্টার পর ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। ধৈর্যের বলেই তা সম্ভব হয়েছে। মানসিক প্রশান্তি শুধু সাফল্যলাভের জন্যই নয়; বরং সবক্ষেত্রেই প্রয়োজন। মানুষের মনের সুপ্ত শক্তিকে প্রকাশের জন্য প্রয়োজন হয় এ প্রশান্তির। মোট কথা, এটি হচ্ছে সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। কাজেই মনকে প্রশান্ত রাখুন। মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি অন্যতম উপায় হলো মেডিটেশন। তাই মেডিটেশন করুন, দেখবেন, মনকে কিছুটা হলেও শান্তি দিতে পারছেন।
উপসংহারে বলা যায়, আপনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে, আপনার স্বপ্নকে আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করে সুনিশ্চিত পরিকল্পনা, কর্মতত্পরতা ও দক্ষতা রেখে সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের মেধাকে মূল্যায়ন করে একজন সফল ও সার্থক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন। কাজের মাঝে ধৈর্য রাখুন, মানসিক প্রশান্তি রাখুন, দেখবেন সাফল্য সুনিশ্চিত, আপনার ইতিবাচক মনোভাব ও মানুষের সাথে সুসম্পর্ক আপনাকে নিয়ে যাবে সফলতার স্বর্ণশিখরে। তবে বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে সাফল্যকে একবার করায়ত্ত করলেই দায়িত্ব শেষ নয়, কারণ সাফল্যের শেষ নেই। সুতরাং সাফল্যকে ধরে রাখতে হবে দৃঢ় ভাবে।