- শ্রাবণ এক গরিব বাবার সন্তান।অভাবের সাথে লড়াই করে সে পাড়ি দিয়েছে জীবনের অনেকটা পথ।তার এই লড়াই করে যাওয়ার পেছনে রয়েছে তার গরিব বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম। কিন্তু বয়সের ঝোঁকে তিনি আজ নুইয়ে পড়েছেন।এখন আর সেই আগের মতো কাজ করতে পারেন না।শরীরেও বেঁধেছে নানান রোগের বাসা।শ্রাবণের মা নেই,ঘরে আছে বাবা আর ছোট বোন শান্তা।শান্তা পড়ালেখা করতে পারে নি।কারন খুব অল্প বয়সে তাদের মা মারা যায়।তারপর থেকে সংসার সামলানোর দায়িত্ব পড়ে তার ওপরে।তাই আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি।শ্রাবণ এবার অনার্স ২ য় বর্ষে পড়ছে।নিজের পড়ালেখার খরচ নিজের বহন করতে হয়।সে জন্য সে কয় একটা টিউশনি করায়।তা থেকে যা আসে তা দিয়ে নিজের খরচ, সংসার চালানো,অসুস্থ বাবার ওষুধ এই সবকিছুই করতে হয়।আর এজন্য তাকে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়।প্রায় পকেটে টাকা থাকে না।খালি পকেট নিয়ে এই শহরের বুকে ছুটে যাচ্ছে সে।শ্রাবণের দুজন বন্ধু ছিল।ওদের সাথে শ্রাবণের ভালো বন্ধুত্ব ছিল।ওরা প্রায়ই একসাথে বসে আড্ডা দিতো।আড্ডা দিতে দিতে প্রায়ই বাদাম,ফুসকা এইগুলো খেতো।তবে শ্রাবণ খেতে চাইতো না এইগুলো,ওরা জোর করে খাওয়াতো।শ্রাবণের এই খেতে না চাওয়ার পেছনের কারন হলো – ওর পকেটে টাকা না থাকা।কারন টাকা না থাকলেও ওর মধ্যে রয়েছে তীব্র আত্নসম্মানবোধ।কারন বন্ধু-বান্ধবের টাকায় খেলে তাদেরকেও যে খাওয়াতে হয় তা সে জানে।তাইতো ওরা যখন খেতে ডাকে তখন ও না খেতে চাওয়ার বাহানা ধরে।তাও ওদের জোরাজুরিতে না খেয়ে পারে না।একদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে শ্রাবন রাস্তায় তার অসুস্থ বাবাকে দেখতে পায়।বাবার মলিন মুখ দেখে তার মনে পড়ে যায় বাবার এ মাসের ওষুধটা তো শেষ হয়ে গেছে।তখনই সে মনে মনে চিন্তা করে এ মাসের টিউশনির টাকাটা অগ্রিম চেয়ে আনবে অসুস্থ বাবার ওষুধ কেনার জন্য।পরের দিনই সে টাকাটা চেয়ে আনে।ওদিকে একদিন তার সেই দুই বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিল তখন একজন বলে উঠল,দেখেছিস শ্রাবন কতটা ছ্যাচড়া।প্রতিদিন আমাদের টাকায় খেয়ে যায় অথচ একদিনও ও আমাদের খাওয়ায় না।তখন অন্যজন বলল,ওকে একটা চরম শিক্ষা দেব এই ছ্যাচড়ামি করার জন্য। তারপর ওরা শ্রাবনকে ফোন দিয়ে বড় একটা হোটেলে আসতে বলে।প্রথমে ও আসতে চায় নি।পরে ওরা বলে অনেক দিন বন্ধুরা মিলে বড় হোটেলে খাই না।আজকে আমরা একসাথে খাব তুই চলে আয়।পার্টি আমরা দুজন দেব তুই শুধু চলে আয়।ওদের জোরাজুরিতে শ্রাবন আর না করতে পারল না।বিকেলবেলা শ্রাবন ওদের সাথে চলে গেল সেই দামি হোটেলে। ওর সেই বন্ধু দুজন অনেক অনেক খাবার ওর্ডার করল।সেটা দেখে শ্রাবণ বলল,বন্ধু আমার কাছে কিন্তু অতিরিক্ত কোনো টাকা নেই। শুনে ওরা বলে, আরে তাতে কোনো সমস্যা নেই,পার্টি তো আমরা দুজন দিচ্ছি।শুনে সে আর কিছু বলল না।খাওয়া প্রায় শেষ তখন ওদের একজন ফোনটা বের করে গোপনে একটা আলার্ম সেট করে ফোনের রিংটোন দিয়া।কিছুক্ষন পর যখন রিং বেজে উঠলো তখন সে ফোন রিসিভ করে অভিনয় শুরু করে।সে এমন অভিনয় করে যাতে বোঝা যায় তার কোনো বন্ধু বিপদে পড়ছে সেখানে এখনই যেতে হবে।সাথে সাথে শ্রাবণের বন্ধু দুজন তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো এবং ওকে বলল,বন্ধু আমরা ১০ মিনিট এর মধ্যে ফিরে আসছি।এই কথা বলেই বেড়িয়ে পড়ল ওরা।১০ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু ওরা ফিরলো না।এভাবেই হয়ে গেল আধা ঘণ্টা কিন্তু ওদের কোনো দেখা নেই।ওদিকে ওয়েটার বার বার বিলের কথা বলছে এসে।সে বার বার ওদের ফোন দেয় কিন্তু ওরা ফোন বন্ধ করে রাখে।শেষে বাবার ওষুধ কেনার সেই টাকাটা দিয়েই হোটেলের বিল দিতে হয়।তার বাবার জন্য ওষুধগুলো কেনা ছিল খুব জরুরি কারন ডাক্তার বলেছিল তার বাবাকে যদি ঠিকমতো ওষুধ খাওয়ানো না হয় তাহলে তার মৃত্যু হয়ে যেতেও পারে। অথচ সেই টাকাটায় এখন দিয়ে দিতে হলো হোটেলের বিল দেয়ার জন্য।হোটেল থেকে বের হয়ে যখন বাবার ওষুধের কথা চিন্তা করতে করতে সে হেঁটে যাচ্ছিল ঠিক তখনি তার বোনের ফোন আসে,ফোনটা ধরার পর যা শুনল তা শোনার জন্য সে একটুও প্রস্তুত ছিল না।এমন কথা যেটা শোনার জন্য কোনো সন্তানই প্রস্তুত থাকে না। ভাইয়া বাবা আর নেই!!! কথাটা শুনে সে যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার বাকশক্তি যেন হারিয়ে যাচ্ছিল।সে কিছুই বলতে পারছিল না।
কাঁদতে কাঁদতে তার বোন বলল,ভাইয়া তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। কথাগুলো যেন তার হ্রদয়টা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছিল।সাথে সাথে সেই বন্ধুদের কল আসে,মামা বহুত ছ্যাচড়ামি করছো,আজকে খাইলা কেমন ধরা?এখন বুঝ কেমন মনু?আসার সময় সেভেন আপ নিয়া আসিস,যা খাইছি হজম করন লাগবো।আমরা সেই জায়গায় বসে আছি যেখানে প্রতিদিন আড্ডা দি। এই কথা শুনে নিজেকে যে কি দিয়ে শান্ত করবে বুঝতে পারছিল না শ্রাবণ। কাঁদতে কাঁদতে বন্ধুদের সামনে গিয়ে দাড়ালো।
দেখছোস মামা,আজকে হোটেলের বিল দেয়া লাগছে তাই কষ্টে কানতাছে হাহাহা…..এই কথা একজন আর একজনকে বলে মজা করছিল।কিন্তু শ্রাবণের চোখের কান্না যে থামছে না।চোখের জল গাল বেয়ে গায়ের মলিন টি-শার্ট টাও ভিজে দিচ্ছিল।দু হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে কান্নাভরা গলায় বলল,তোরা আমায় সবসময় খাওয়াতি কিন্তু আমি কখনই খাবারের বিল দিতে পারতাম না।আর এ জন্যই আমি কখনই তোদের কিছু খেতে চাইতাম না।কিন্তু তাও তোরা জোরাজুরি করতি তাই বাধ্য হয়ে খেতে হতো। জানিস আমি কেন বিল দিতে পারতাম না??? কারন আমার টাকায় পরিবারের তিন জনের পেট চলতো,অসুস্থ বাবার চিকিৎসা আর আমার পড়ালেখার খরচ চালানোর পর আমার হাত খরচের জন্য কোনো টাকাই থাকতো না।আজ আমি যে টাকা দিয়ে হোটেলের বিল দিলাম সেই টাকাটা ছিল আমার বাবার ওষুধ কেনার। যেই ওষুধের জন্য আমার বাবা আর এই দুনিয়ায় নেই…………
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল শ্রাবণ।
আবার দু হাতে চোখ মুছে বলল,তোরা থাক আমি চলে যাচ্ছি আমার বাবার কবর দিতে।আর ৩ দিন পরে আমার বাবার কুলখানিতে তোদের দাওয়াত রইল,যত ইচ্ছা গিয়ে খেয়ে আসিস।
আমার রক্ত বিক্রি করে খাওয়াবো তোদের😥😥
মানসিক প্রশান্তি ! পর্ব-২ , ভোগে সুখ নয়, ত্যাগেই সুখ !
গত পর্বে আমার ছোট মাথার ছোট কিছু ভাবনা গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরেছি আমার মত করে , আজকেও কিছু আলোচনা...