আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আজ আমি কিছু কথা বলব স্টিভ জবস সম্পর্কে। স্টিভ জবস এর নাম তো কম বেশি আমরা সবাই শুনেছি। আমরা যে ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করি সেই ল্যাপটপ বা পার্সনাল কম্পিউটারের জনক ছিলেন স্টিভ জবস। স্টিভ জবস ই ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি টেবিলে বসানো কম্পিউটারের বদলে ল্যাপটপ নামক সহজে যেকোনো স্থানে পরিবহন যোগ্য কম্পিউটার আবিষ্কার করেন। স্টিভ জবস এর জন্ম কোথায় হয়েছিল এবং তার আসল বাবা-মা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায় না কারণ তিনি ছোটবেলা থেকে ই ছিলেন পরিত্যক্ত। অর্থাৎ তাকে খুব ছোটবেলায় ই তার বাবা মা ত্যাগ করেছিলেন। এক গাড়ীর মিস্ত্রী পল জবস এবং তার স্ত্রী ক্লারা জবস ছিলেন নিঃসন্তান। তারা তাকে ছোটবেলা দত্তক নিয়েছিলেন। তারা স্টিভ কে তাদের নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি আদর -স্নেহে বড় করে তোলেন। তারা তাকে কখনো এটা অনুভব করতে ই দেন নি যে তিনি পরিত্যক্ত ছিলেন।তারা সব সময় তাকে অনেক বেশি ভালবাসতেন। তারা তাকে সব সময় এটা বোঝাতে চাইতেন যে তিনি খুব ই বিশেষ একজন ছিলেন এবং তারা তাকে অনেক পছন্দ করতেন।
স্টিভ জবস এর মা ক্লারা জবস তাকে স্কুলে ভর্তি করানোর আগেই কিভাবে লিখতে পড়তে হয় তা শিখিয়ে দিয়েছিলো। সুতরাং যখন তিনি বিদ্যালয়ে যান তখন তিনি দেখেন যে সেখানে যা কিছু পড়ানো হচ্ছে তা তিনি আগে থেকে ই জানেন তাই তিনি খুব বিরক্ত বোধ করতেন সেই শেখানো বিষয়গুলো বার বার পড়তে।তাই তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য হাসি তামাশা করতেন সবার সাথে। আর এর ফলে তিনি অনেক সমস্যার সম্মুখীনও হতেন। কারণ বিদ্যালয়ে সকলে ই পড়তে যায় সেখানে তিনি না পড়ে সারাক্ষন খেলতে থাকলে সেটা তো কেও মেনে নেবেন না।কয়েক বছর অবধি এভাবে ই চলতে থাকে। তার আচরণ থেকে সকলে ই স্পষ্টভাবে এটা বুঝে গেছিলেন যে তিনি কখনো অন্য কারো কর্তৃত্ব পছন্দ করতেন না একটুও। তিনি অনেক ধরনের কর্তৃপক্ষের সাথে পরিচিত হন যাদের সাথে আগে কখনো দেখা হয় নি আর তাদের কর্তৃত্ব তার একটুও ভালো লাগতো না। যখন সে চতুর্থ শ্রেণীতে ছিলো তখন তার মাঝে কিছুটা পরিবর্তন এলো। তার ক্লাসে একজন শিক্ষিকা ছিলেন যার নাম ছিলো ইমোজেন। তিনি খুব ভালো করে কাছ থেকে স্টিভ কে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার আচরণ বদলানোর চেষ্টা করেন। এবং তাকে পরিচালনা করার পদ্ধতি বের করেন। তিনি তার কাজে সফলও হন। তিনি তাকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিতেন এবং তার বিনিময়ে তাকে টাকা এবং খাবার দিতেন। তিনি স্টিভ কে কিছু অংক করতে দেন একটি খাতায় এবং তাকে বলেন সে যেনো সেটি পরের দিন জমা দেন আর এর বিনিময়ে সে তাকে টাকা এবং ললিপপ দিতে চান। তখন স্টিভ তার কথামত দুই দিনের মধ্যে সব অংক সমাধান করে তার শিক্ষকের কাছে সেটি জমা দেন। এভাবে কয়েক মাস চলতে থাকে এবং তারপর থেকে স্টিভ পড়াশোনায় অনেক আনন্দ খুজে পান এবং নিজে নিজে ই পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করেন। তখন তাকে দিয়ে কিছু করানোর বিনিময়ে তাকে আর কোনো কিছু দেয়ার প্রয়োজন ছিলো না। সে তার সেই শিক্ষিকাকেও অনেক ভালবাসতেন এবং তার সব কথা মেনে চলতেন। তারপর আবার সে তার ক্লাসের একজন শিক্ষকের ক্লাসে নিজেকে বিশেষ কিছু একটা ভাবতেন। ধীরে৷ ধীরে তিনি সকল শিক্ষকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেন। সকলের মতে ই তিনি ব্যতিক্রমী বুদ্ধিমান ছিলেন। শুধুমাত্র শিক্ষকদের কাছে ই না তিনি তার বাবা-মায়ের কাছেও অনেক প্রশংসিত এবং বুদ্ধিমান ছিলেন। চতুর্থ শ্রেণীর শেষে তিনি খুব ভালো ফলাফল করেন এবং তার শিক্ষকেরা ঠিক করেন যে তাকে আরো উপরের ক্লাসে থাকার যোগ্য ঘোষণা করেন তারা তাকে সপ্তম শ্রেণীতে থাকার প্রস্তাব দিলেন তার বাবা-মাকে কিন্তু তারা তাকে শুধু এক ক্লাস উপরে উঠান তার শিক্ষকদের এরকম সিদ্ধান্তের কারণ হলো কয়েক ক্লাস উপরে থাকলে সে পড়াশোনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে এবং আরো অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। যাইহোক এভাবে সে অসামান্য দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর তিনি আর তার বন্ধুরা মিলে একটি এপল নামে কোম্পানি তৈরি করেন যা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। স্টিভ জবস এপল কোম্পানির যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং প্রধান এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা ছিলেন। তার এই কোম্পানির মাধ্যমে ই পার্সোনাল কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়। তাছাড়া তিনি ভোক্তা ও কম্পিউটারের বিদ্যুৎ সম্পর্কিত পেশায়ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। আর তা সম্ভব হয়েছিল এপল এর মাধ্যমে কম্পিউটার বাজারজাত করার মাধ্যমে।
১৯৮৫ সালে পরিচালদের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তিনি এপল ত্যাগ করেন এবং নিজের নেক্সট নামক প্রতিষ্ঠান করলেন যা একটি কম্পিউটার প্লাটফর্ম উন্নয়ন কোম্পানি যা উচ্চতর শিক্ষা ও ব্যবসায়িক কাজের জন্য বিশেষায়িত। অপরদিকে জবস এর অনুপস্থিতিতে এপল কোম্পানির অনেক অবনতি হতে থাকে এবং তা নতুন কোনো সফটওয়্যার আনতে ব্যর্থ হয়। পপরবর্তীতে তারা আবার জবস কে ফিরিয়ে আনেন উপদেষ্টা হিসেবে। তিনি ফিরে এসে প্রায় দেউলিয়াত্বের অবস্থা থেকে আবার এপল কে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে আসেন। তিনি আইম্যাক,আইপ্যাড, আইফোন এবং আইপডের উন্নয়নের তদারকি করেছিলেন। এই প্রযুক্তিগুলো এতো সহজ এবং বন্ধুসুলভ যে একটা শিশুও এগুলো পরিচালনা করতে পারে। তার তত্বাবধানে এপল আরো অনেক উন্নতি লাভ করতে থাকে এবং ২০১১সালে এপল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এই সফলতা ইতিহাসে হঠাৎ এক বিশাল সফলতা হিসেবে গণ্য হয়।আর এই সব কিছু সম্ভব হয় স্টিভ জবস এর জন্য। তিনি কোম্পানির এপল স্টোর,আই টিউনস, দী এপ স্টোর ও পরিচালনা করতেন।
স্টিভ জবস একজন স্বপ দ্রষ্টা হিসেবে ব্যপক সমাদৃত হয়েছিলেন। স্টিভ কম্পিউটারের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটান এবং কিভাবে তারা এটি সহজে ই তাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করবেন সেটি তুলে ধরেন।একসময় জবস ল্যাপটপে ওয়াই ফাই লাইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং তিনি প্রত্যেক ল্যাপটপে ওয়াই ফাই সুবিধার সমন্বয় ঘটান এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রসার ঘটান।সুতরাং জবসের দেখা স্বপ্ন একটা সময় পর ঠিক ই বাস্তবে রূপ লাভ করেছিলো।
এই ছিলো স্টিভ জবস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। তার সম্পর্কে তার একজন সহকর্মী বলেন যে তাকে ছোট বেলা পরিত্যক্ত করার ফলে সে যে মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছিলেন তা তার ব্যক্তিত্বে এক অসাধারণ প্রভাব ফেলেছিলেন এবং এর ফলে ই তিনি জীবনে ব্যপক সফলতা লাভ করেছিলেন। তিনি তার সারা জীবন ই এপল কোম্পানির উন্নতি এবং পার্সোনাল কম্পিউটারের উন্নতিতে ব্যয় করেন। তিনি ১৯৫৫ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ২০১২ সালের ৫ই অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন
তিনি মারা গেলেও তিনি আমাদের সকলের মাঝে ই জীবত আছেন তার কর্মের জন্য। তার আবিষ্কৃত ল্যাপটপ আজ সবার দৈনন্দিন জীবনের এক অতি প্রয়োজনীয় উপাদান এবং সঙ্গী।
সমালোচনা কেন করা উচিত,কেন উচিত নয়?
আজকে আমি যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো তাহলো কখনো অন্যের সমালোচনা করবেন না।আমি জানি তোমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলে!চোখের সামনে...