নীরবসাধনা
যতো নিশি যায়
ওগো হৃদসঞ্চারিনী আমার
ভেঁসে যাই চেতনায়।
বিলুপ্তভূবনের কোনো কাননবাসরে
যেথা নাই কলরব,
আমার প্রাণের মাঝে তোমায় সেথা
আমি করি অনুভব!
আজন্মকাল প্রেমপূর্ণতায় উথলা
সুখের লতামণ্ডপে,
স্মরি গো, তোমায় আকাঙ্খাদ্বীপ্ত এক
মধুময় তপজপে।
আজন্মকালের এই ধ্বনিত সুরস্রোতেরে
তোমার বিজনতা গ্রাসে,
চারিদিক ছেয়ে যায় শূন্যতা আর
বহুদীর্ঘ নিঃশ্বাসে!
শুধু নীরবতা আর নিদয় শূন্যতা
তোমার দিক হতে,
করুনাহীনভাবে ভেঁসে আসে
আমার সাধনাপথে।
তবু বসে আছি পূর্বধ্যানে মগ্ন হৃদয়ে
তোমার চরণমূলে,
করুণাকলিকা ঝরার আশায়
উর্ধ্বপানে মুখ তুলে।
নোটঃ
ভালোবাসা পৃথিবীর বুকে অমর এক শব্দের নাম।পৃথিবী শুরুর ইতিহাসের প্রথম পাতায় যেমন ভালোবাসা শব্দটি ছিলো, ঠিক তেমনি যেদিন পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশেষ পাতাটি উল্টানো হবে বহুদীর্ঘ ইতিহাসের সমাপ্তির জন্য, সেদিনও সেই শেষ পাতায় এই অমর শব্দটি থাকবে।
পৃথিবীর উপর দিয়ে কতো দূর্ভোগ চলে গেছে, সেই সাথে মুছে গেছে ইতিহাসের কতোকিছু! কতোকিছুর মাঝে এসেছে কতো বিবর্তন!
পুরোনো অস্তিত্ব-অবসান আর নতুন অস্তিত্ব-উত্থান।কিন্তু, এই এক শব্দ,একটি জিনিস আছে অম্লান। তাহলো ভালোবাসা। প্রেমের বিলুপ্তভূবনে দুজন মানুষের নৈসর্গিক বিচরণ!
একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে থাকা প্রশান্তির
দৃষ্টিতে।
আমার শহরভরা শত মুখ ছেড়ে
চেয়ে থাকি তব মুখের পানে,
কি যে অনুভূতি! কি যে আকর্ষণ!
শুধু অন্তরের এই সত্তা জানে।
কিন্তু,সেই ভালোবাসার মাঝে অনেকের হয়তো এমন সময় আসে,যেখানে একজন অন্যজনের জন্যে হাহাকার করে। আর অন্যজন থেকে কোনো প্রস্তুুত্তর আসেনা!
তখন প্রথমজন হয় দ্বিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য।পাগলের মতো নিজেকে শূন্যতার মাঝে অনুভব করে! চারিদিকের জগৎ তার জন্য হয়ে উঠে বিরক্তিকর, অসহ্য।
মানুষের সঙ্গ ছেড়ে চলে যায় খোলা প্রান্তরে,বিস্তৃত অবসরের জায়গায়। নির্জনে প্রিয়জনের সাধনায় লতামণ্ডপ সাজায় বিজনতার মাঝে। তৈরী করে নেয় নিজের কল্পনার জন্য আলাদা এক জগৎ।
যা সমসাময়িক ও নিত্যদিনের ভূবনের থেকে আলাদা। সকলের অলক্ষ্যে সতন্ত্র এক ভূবন, বিলুপ্তভূবন।
মাধ্যমিক স্কুল লাইফে কবিতা, বিশেষ করে প্রেম-ভালোবাসার কবিতা, শোকজাতীয় কবিতা বা গীতিকবিতার প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিলো।
সেসময় ভাবতাম, কবিরা কিভাবে একজনের কল্পনায় ডুবে যায়! কিভাবে কল্পনায় কাউকে চিত্রিত করে!
কিভাবে কল্পনায় তাদেরকে অনুভব করে নিজেদের অভিব্যাক্তি বর্ণণা করে! তাও আবার এতো সংক্ষিপ্ত কবিতার কয়েকটা লাইনের মধ্যে!
তারই প্রচেষ্টা হিসেবে প্রথম গীতিকবিতা বা সংক্ষিপ্ত কবিতায় নিজের পরীক্ষা চালাই।”নীরবসাধনা” কবিতাটি ক্লাস নাইনে লেখা হয়েছিলো। সময়টা আনুমানিক ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮।কোনো এক পড়ন্ত বিকেলবেলায়।
“নীল রঙের প্রেমপত্র”
গোলাপের ঐ পাপড়িগুলো
শুকিয়ে গেছে আজকে,
খুলিনি তাই নীলরঙের
প্রেমপত্রের ভাঁজকে।
আসায় তোমার এতোই দেরি
প্রতিক্ষায় নেই মনের ফেরি,
পড়েছি পায়ে নিগড়-বেড়ি
চুকিয়ে সকল কাজকে।
এতই নিথর তোমার স্মৃতি
নীরবতা এতো ভাবে,
ক্ষনপ্রভাসম ক্ষণ কেটে যায়
এমনি তো সব যাবে!
অসাড় তোমার কন্ঠভাষা
নিংড়ে ফেলে সকল আশা,
নিঃসঙ্গ হায়,ছাড়িয়ে যে যায়
লুপ্ত-সময় সাঁঝকে।
খুলিনি তাই নীলরঙের
প্রেমপত্রের ভাঁজকে।
উথলে ওঠে বেদনা-জোয়ার
ছড়িয়ে পড়ে গলিত ফোয়ার!
তবুও সেতো করেনা শীতল
উতলা মনের ঝাঁঝকে।
খুলিনি তাই নীলরঙের
প্রেমপত্রের ভাঁজকে।
নোটঃ
কখনো বা ভালোবাসার মাঝখানে অভিমান কাজ করে। তার পক্ষ থেকে খবর এসেছে কিন্তু তার কোনো দেখা নেই!
এমন অভিমান, অভিব্যাক্তিও হয় ভালোবাসার মাঝে। অনেক সময় এই অভিমান বিচ্ছেদের কারণ হলেও তা মধুরতার বিকাশ ঘটায়।
একটি সম্পর্কে কখনো শুধু হৃদ্যতা থাকতে পারে না।সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-নিরানন্দ,আবেগ-অনুভূতি,মান-অভিমান, চিন্তা-চেতনা,মিল-অমিল সব মিলিয়েই একটা সম্পর্ক।
তবে যে মাঝপথে ছেড়ে চলে যায়, সে কখনো হাসিমুখে সম্পর্কটা শুরু করেনি।
শুরুর থেকে তার মন বিচ্ছেদের প্রতি আসক্ত ছিলো।একজনের মনে ভালোবাসার জন্ম দিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার অর্থ হলো তাকে মৃত্যুমুখে ফেলে দেওয়া। সম্পূর্ণ অসহায় করে যাওয়া।
একজন মানুষ যার কাছে শান্তি পায়,যার কাছে সর্বাবস্থায় আশ্রয় খোঁজে, তারও উচিত নিজেকে আজীবন তার কাছে বিশ্বাসী করে রাখা।
এমন অনেক মানুষ আছে যারা তাদের প্রিয়জনের মুখ দেখলে অন্তরে প্রশান্তি পায়।নিজের শহরভরা শত মুখ ছেড়ে তারই মুখখানি দেখার জন্য পাগলপারা হয়ে থাকে।প্রিয়জনের মুখ দেখামাত্রই সব দুঃখ-কষ্ট,চিন্তা-চেতনা,নিরাশা,উদাসিনতা ভুলে এক দৃষ্টিতে তার প্রতি তাকিয়ে থাকে।
“নীলরঙের প্রেমপত্র” কবিতাটিও ক্লাস নাইনে উঠে লেখা হয়।
[yasr_visitor_votes size=”small”]