কিছুদিন হলেও সারা দেশে নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে এমন কি সব জায়গায় এখন টপ অব দ্য কান্ট্রি হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আজকের এই গল্প, যার নাম দিয়েছি, বালুচরের অসমাপ্ত গল্প। সব গল্পই আসলে গল্প নয় কিছুটা বাস্তবতা মিশে থাকে সেখানে। তেমনি একটি গল্প এই বালুচরের অসমাপ্ত আত্মজীবনী। প্রতিটি মানুষের জীবনী ভিন্ন ভিন্ন। কারো জীবন হয়তো সহজ সরল আবার কারো কারো জীবন অনেক ব্যতিক্রমী। কিছু কিছু জীবনে চলে আসে সরলতা আবার কিছু কিছু জীবনী হয়ে ওঠে কিছু কিছু গল্প।
যে গল্পগুলো আমাদের যে গল্প গুলো সমাজের বাস্তব চিত্র গুলি তুলে ধরে, গল্প হলেও অনেক সময় সেগুলো আর গল্পের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনা। হয়ে ওঠে কিছু অসাধারণ কাব্য। জীবনকে রোমাঞ্চকর করতে অভিজ্ঞতা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। প্রতিটি ঘটনাই কিছু-না-কিছু রোমান্সে পরিপূর্ণ। বালুচরের গল্পটি ঠিক সেরকমই একটি গল্প। গল্প টি বেশি দিনের পুরোনো নয়। ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরেছি কিছুদিন হলো।
বাড়িতে এসে যেটা বুঝতে পারলাম এখানকার জীবনযাত্রা গুলো যতটা উৎসবমুখর তার চাইতে বেশি আবেগের। কিছুদিন আগের কথা, আমার সম্পর্কে এক বিয়াই আমার উপর একটি আবদার চেয়ে আমাকে বাধিত করে ফেলল। মন চাইছিলো না তবু বাধ্য হয়ে তার কথা মেনে নিলাম। যেতে হবে কোন এক অজানা চরে। আমাদের জেলার বেশিরভাগ অঞ্চলগুলো চরাঞ্চল। এক সময় সেগুলো ছিল বিস্তৃর্ণ এবং পরিপূর্ণ মানুষের বসবাস মুখর এক প্রাণবন্ত গ্রাম।
কিন্তু যমুনার করাল গ্রাসে তা এখন হয়ে উঠেছে একেকটি দুর্গম এলাকা। স্থানীয় মানুষেরা ওইসব দুর্গম এলাকাগুলোকে চর হিসেবেই চিহ্নিত করে। যদিও মানুষের বসবাসের সংখ্যা নেহাত কম নয় সেখানে। এখনো প্রায় জেলার 45 শতাংশ লোক সেইসব দুর্গম এলাকায় বসবাস করে। সেখানে অর্থনৈতিক কোনো দুর্বলতা নেই। আছে শুধু যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতাগুলো মানুষকে আরো বাস্তবমুখী করে তোলে। আমারও ঠিক সেরকম একটি অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছিল। এমন একটি অভিজ্ঞতা যা বাস্তবতাকে আমার সামনে তুলে ধরেছে।
যাক মূল গল্পে আসা যাক। আমার সেই কথিত এক আত্মীয়, যাকে আমি বিয়াই হিসেবে সম্বোধন করেছে। তার আবদার এর পরিপ্রেক্ষিতে খুব ভোরবেলা রওনা হয়ে গেলাম। আমাদের গন্তব্য স্থল আদিতপুর। যারা আমার এই সিরাজগঞ্জ জেলার মানুষ তারা হয়তো নাম কি শুনেছেন? আবার অনেকে হয়তো চিনতে পারবেন না। আমি কখনো সেখানে পূর্বে যায়নি। হতে পারে আমার সেই বিয়াই ও সেখানে যায়নি। এটাই আমাদের সর্বপ্রথম যাত্রা। খুব ভোরবেলা বাজারে চলে এলাম। তবে বিষয়টি প্রথমে আমি যেরকম ভেবেছিলাম এখন সেরকম টা মনে হচ্ছে না।
আমি দেখতে পেলাম আমারই মত 10 থেকে 15 জন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সাথে আলাপ আলোচনার পর বুঝতে পারলাম সবাই আমার মতই, সেই আজিতপুরের যাত্রী। আমরা সবাই হোটেলে নাস্তা সেরে নিলাম। আমার বিয়াই খুব খুশি। সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলেছে সে। হোটেলে নাস্তা সারতে সারতে পুরো বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে গেল। আমরা যাচ্ছি সেখানকার এক নির্বাচনী প্রার্থী পক্ষ হয়ে। এখনকার নির্বাচনগুলো এরকমই।
সবাই চায় তাদের পক্ষের ম্যানপাওয়ার গুলো বেশি দেখাতে। বুঝতে আর বাকি রইল না শেষমেষ নিজেরা মানুষের দালাল হয়ে যাচ্ছি। তবুও ঘরে বসে না থেকে ভাবলাম একটু ঘুরে আসি। নির্বাচনী যে ব্যবস্থা তাতে ঘোরাঘুরি টাই সেখানকার কাজ। যে প্রার্থী যত লোক নিয়ে ঘুরবে তার জনপ্রিয়তা ততোই বাড়বে। আমরা রওনা হয়ে গেলাম। ঘন্টা দুয়েক পর আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। গাড়ি থেকে নামার পর আমরা সিএনজিতে চড়ে বসলাম। অবশ্য সিএনজি গুলো আগে থেকেই হয়তো রিজার্ভ করা ছিল। আমাদের খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। তারপর সেখান থেকে আমরা সোজা চলে গেলাম কোন এক নদীর কিনারায়। সবাই এটাকে নৌকা ঘাট হিসেবেই চেনে।
শীতের দিন হওয়ায় তখনো কুয়াশাগুলো আবছা আবছা ছিল। নদীর ঘাটে অনেক মানুষ। রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় নৌকা।বুঝতে বাকি থাকল না এবার জার্নিটা হয়তো নৌকায় করতে হবে। কিন্তু আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, আমাদের মনের ভিতর কেমন যেন একটা উৎসব উৎসব ভাব চলে এলো। খুব বেশি নদীর পাড়ে বেড়াতে আসা হয়নি। প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য আমি এতদিন খেয়ালই করিনি। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর কিছু বালু ভূমি। খুব সুন্দর লাগছিল। আমরা সবাই স্মার্টফোনে ছবি তুলতে লাগলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এসে ভালোই হয়েছে।
ক্লান্তিময় জীবন থেকে যে জিনিসটা পাইনি তা এখানে রয়েছে। এখানকার অপরূপ আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিছুক্ষণের মধ্যে মনকে, রোমান্টিক করে তুলল। আমরা বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললাম। ছবিগুলো খুব অসাধারণ হয়েছিল। দেখলে মনে হবে গ্রাফিক্সে আর্ট করা। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। এটি বাস্তব জীবনের একটি বাস্তবমুখী গল্প। এখানকার মানুষের চলাচলের একমাত্র ব্যবস্থা নৌকা। মানুষ প্রতিদিন সেই নৌকায় করে এই পারে আসে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনতে। আবার সন্ধে হবার আগেই তারা যার যার বাড়িতে ফিরে যায়।
তবে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। এখানে অনেকেরই ব্যক্তিগত নৌকা রয়েছে। আবার অনেকে ভাড়া হিসেবে যাত্রী আনা-নেওয়া করে। মোটামুটি এটিই তাদের জীবন ব্যবস্থা। তাদের সুখ শুধু প্রাকৃতিক। আর দুঃখ গুলো মনে হলো বাস্তবতা। যাইহোক ঘন্টাখানেক পর আমাদের সবাইকে একটি বড় নৌকায় তোলা হলো। সেখানে আমরা ছাড়াও অনেক যাত্রী উঠে পরল। আশেপাশে হিমেল হাওয়া গুলো বইতে শুরু করে দিল। আকাশের দিকে তাকাতেই খুব ভালো লাগছিল। আমি গিয়ে বসলাম নৌকার পাটাতনের ওপর।
সেখান থেকে নদীর অপরূপ সৌন্দর্য তা আমাকে আকর্ষিত করছিল। জীবনে যতগুলো সৌন্দর্য এসেছে তবে নদীতে নৌকা চলার অভিজ্ঞতা সেখানে যুক্ত হওয়ার মত যোগ্যতা রাখে।তবে সাঁতার না জানায় একটু একটু ভয় শুরু হতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলাম যদি নৌকা ডুবে যায় তাহলে আমি কি করবো। বারবার বিধাতাকে স্মরণ করতে লাগলাম। আবার অনেক মানুষের মাঝে আছি তাই মনের সাহসটা অটোমেটিক্যালি বেড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নৌকা চলতে শুরু করল। নৌকাটি ইঞ্জিনচালিত ছিল। ইঞ্জিনিয়ার ভটভট শব্দ পুরো ভ্রমণ আরো রোমাঞ্চকর করে দিল। নদীর দু’পাশে ছোট ছোট কিছু চর দেখা যাচ্ছে। নদীর মাঝখানে আরো অনেক নৌকা চলাচল করছে।
কি অপরূপ দৃশ্য। দৃশ্যটি বাস্তব জীবনে হৃদয়কে একদম ঠান্ডা করে দেয়। মনে হয় তখন নিজেকে বাঙালি। আসলে নৌকা এবং নদী এটি আমাদের বাংলার ঐতিহ্য। আমরা যারা নদীকে ভালোবাসি ঠিক তেমনি ভালোবাসি নদীতে চলা নৌকাকে। নৌকাযাত্রা টা একটা অসাধারণ যাত্রা। যারা নৌকা ভ্রমণ করেছেন তারা খুব ভাল করেই জিনিসটি বুঝতে পারবেন। আমার কাছে ভ্রমণটি খুব ভালোই লাগছিল। বেলা তখন এগারোটা। এখনো আমরা ওপার পৌঁছাতে পারিনি। যাদের সাথে এসেছি তাদের মুখ থেকে শোনা পৌঁছাতে আরও এক ঘন্টা লাগবে।
আমি ভাবতে লাগলাম নৌকা তো খুব দ্রুতই চলছে। তারপরও যদি আরো এক ঘন্টা লাগে তাহলে দূরত্ব মোটামুটি কম নয়। নৌকাতে অনেক মানুষ। মহিলা মানুষ রয়েছে গুটিকয়েক। তাদের প্রত্যেকের মুখ ঢাকা। গ্রামের মেয়েগুলো আসলে খুব সহজ-সরল হয়। তাদের লজ্জা লজ্জা চাহনিতে সে কথা গুলো পরিষ্কার হল। আমি সেদিকে নজর না দিয়ে আমি নদীর সৌন্দর্য গুলো উপভোগ করছিলাম। দেখতে দেখতে এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। একটা সময় নৌকা ঘাটে এসে ভিড়ল। অবশ্য নৌকা ভাড়া টা আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের পকেট থেকে কোনো টাকা-পয়সা খরচ করতে হচ্ছে না। যা কিছু খরচ করা আর আমার সেই বিয়াই করছে। আমরা শুধু তার দেখানো পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমরা সবাই নৌকা থেকে নামলাম। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চারিদিকে দেখতে লাগলাম। নদী থেকে অনেক উঁচু চর। আমরা উপরের দিকে উঠে গেলাম। উপরে উঠার পরে দেখলাম বিস্তীর্ণ ভালো ভূমি। দূরে কিছু ভুট্টাক্ষেত ও কিছু আবাদি জমি। রাস্তাটি নিতান্তই বালু মাখা। পা টিপে টিপে যাচ্ছি, কারণ বালিতে পা দেবে যায়। খুব অস্বস্তি হতে লাগলো। অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে মাঝে এই জিনিষটি আমাকে কষ্ট দিলো। সব জায়গায় শুধু বালি আর বালি। রাস্তাগুলো মনে হয় বালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমরা সবাই বেশ কিছুদূর হেঁটে এগিয়ে গেলাম।
এখানে হেঁটে যেতে হবে কারণ যাতায়াতের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। পায়ে হাটা এখানকার একমাত্র অবলম্বন। অবশ্য কেউ কাউকে কাউকে মোটরসাইকেল নিয়ে চলতে দেখলাম।অবশ্য এসব চরাঞ্চলে যাদের মোটরবাইক আছে তারা খুব স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন। এখানে তাদেরই রাজত্ব। আমরা কেউ গাড়ি নিয়ে আসেনি কারণ এলাকাটি আমাদের পরিচিত নয়। তাছাড়া দূরের পথ। কখন ফিরব কেউ জানিনা। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখলাম মানুষের ভিড়। টিনের তৈরি একটি স্কুলঘর কে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনী সেন্টার। পোস্টারে পোস্টারে চারিদিকে শুধু দড়ি দিয়ে টানিয়ে রাখা হয়েছে। তবে পুরুষ মানুষের চাইতে মহিলা মানুষের সংখ্যা গুলোই মনে হল আধিক্য। আমরা এগিয়ে চললাম। কিছুক্ষণ পর সেখানকার কিছু ব্যক্তিবর্গ আমাদের দিকে ছুটে এলো। তাদের প্রত্যেকের মুখেই মিষ্টি মিষ্টি হাসি।
হয়তো আমার বিয়াই কে তারা দেখে ফেলেছে। আমরা তাদের সাথে মুসাফাহা ও কোলাকুলি সেরে নিলাম। আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো গ্রামের ভিতরে। জনবসতি খুব একটা বেশি মনে হলো না। তবুও একটি বাড়ির সাথে আরেকটি বাড়ি লাগানো। ঘনবসতি। বেশ কিছু পশু দেখা গেল। মনে হচ্ছিল এটি তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির একমাত্র অবলম্বন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বড় বড় গরু দেখতে পেলাম আমরা। এখানে গরু লালন-পালনের খরচ টা অনেক কম। এখানে গরু লালন পালন করে অনেকেই খুব ভালো ইনকাম করেন।এখানে গরু লালন পালন করতে কোন খরচ হয় না তাদের।
প্রাকৃতিকভাবেই এখানে সর্ষের উৎপাদন খুব ভালো হয়। বেশকছু শস্য দেখা গেল যেগুলো অন্যান্য অঞ্চলে হতে দেখা যায় না। তবে সেই শস্যের আবাদ এখানে খুব ভালো। চারিদিকে ফসলি জমি। কোথাও লাগানো হয়েছে ভুট্টা, মরিচ, বেগুন, ও টমেটো। শীতকাল হয় শীতকালীন সবজির উৎপাদন এখানে খুব জনপ্রিয়। প্রতিটি শস্যক্ষেত্র দিয়ে ভরে আছে। দেখে মনে হবে অপর এক সম্ভাবনাময় কৃষি উৎপাদনের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ।
চরাঞ্চল হলেও এখানে সর্ষের আকাশচুম্বী উৎপাদন এখানকার মানুষকে সমৃদ্ধশালি করেছে। যাই হোক এখন এখানে শুধু কথা আর কথা। তবে সব কথাগুলোই নির্বাচনকেন্দ্রিক। কে উঠবে, কে জিতবে, কার ভোট কত। এইসব নিয়ে মাতামাতি অবস্থা। আমরা কোন কথা বলছি না। আমরা এখানকার অতিথি। শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে সবকিছু দেখে যাচ্ছি। তবে যাই কিছু দেখছে শুধু অবাক হচ্ছি। ঘন্টাখানেক পর বুঝতে পারলাম আমরা যে প্রার্থীর প্রচারণায় এসেছি উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনার নির্বাচনী মার্কা তালা। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম তার সাথে কথা বলেই।
তবে লোকটি খুব সাধারন একজন ভদ্রলোক।কথায় কথায় সবার সাথে পরিচিত হতে লাগলাম। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম এটা জেনে। ভদ্রলোকের নাম সালাম। লোকে তাকে সালাম মেম্বার হিসেবে চেনে। বিগত দু দুবার তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। তবুও লোকে তাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেনে। লোকটির অভাব-অনটন তেমন নেই বললেই চলে। তবে তার মুখ দেখে বোঝা গেল তার ভিতর লুকিয়ে রাখা কষ্টগুলো অতি সাধারণ নয়। লোকমুখে শোনা গেল লোকটির কপাল খুব একটা ভালো নয়। ছেলে বলতে একটি ছেলে ছিল।
মারা গিয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। ছেলেটি খুব সুন্দর ছিল। নাম ছিল তার আতিক। একবার কোনো এক কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রাত্রিবেলা হওয়াতে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া যায় নি। দুর্গম চরাঞ্চলে রাত্রিবেলা যাতায়াত ব্যবস্থা গুলো ভূতুড়ে কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়। ছেলেটি মারা গিয়েছিল রাস্তায়। যখন যাতায়াত ব্যবস্থার একমাত্র বাহন “নৌকা ,”পাওয়া গিয়েছিল তখন খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষনে আতিক চলে গেছেন অন্য দুনিয়ায়। হৃদয় বিদারক একটি ঘটনা। লোকের মুখে শোনা গেল যদি ঠিক সময়ে হাসপাতালে নেওয়া যেত তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত। কিন্তু কি আর করার আছে ভাগ্য তাদেরকে এভাবে দুর্গম এলাকার বাসিন্দা করে রেখেছে।
এক সময় তাদের সবকিছুই ছিল। কিন্তু এখন যা দেখতে পাচ্ছি শুধু সেটুকুই আছে। ভাগ্যকে দোষ দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোন কিছু করার নেই। এত দুঃখের মাঝেও কিছু আফসোসের কথা শোনা গেল। সালাম মেম্বার একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশকে স্বাধীন করতে পারলেও, জীবন সংগ্রামে তিনি এখনো পুরোপুরি স্বাধীনতা পাননি। অনেক চিন্তা করতে হয় তাকে। ছেলে মারা যাবার পরে তার জীবনের আশাগুলো ক্ষীণ হয়ে গেছে তা তাকে দেখলেই বোঝা যায়। তবে ভদ্রলোকের তিন তিনটে মেয়ে আছে। মেয়েগুলো অত্যন্ত ভদ্র সভাবের। কিন্তু বাইরের লোকের মুখে যখন শুনতে পারলাম। তখন নিজেকে আর বিশ্বাস করতে পারলাম না এমন ঘটনা আমাদের থাকতে পারে।
ঘটনাটি হল লোকটির তিনটি মেয়ের মধ্যে একটি মেয়েরও বিয়ে হয়নি।কিন্তু মেয়েগুলোর শারীরিক গঠন ও চেহারার মাধুর্যতা কিন্তু সে গল্পগুলো বলে না। এত সুন্দর সুন্দর এবং অতি ভদ্র মেয়ের কেন বিয়ে হয়নি। আমিও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে লাগলাম।যদিও যে কাজে গিয়েছে সেটি আসলে কোন কাজের নয়। কাজ হচ্ছে শুধু ঘোরাঘুরি। এ রাস্তা থেকে ও রাস্তা এখান থেকে ওখানে এটাই কাজ। সেই কাজের সুবিধা আয় আমাদের একটু সুবিধাই হলো। আমরা অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে লাগলাম। তবে আমি বেশি সিরিয়াস ছিলাম মেম্বার সাহেবের তিন মেয়েকে নিয়ে। লোকটি আমাদের দেশের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিক ঐ, তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এখন আমার ভাবতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমি ঘাটাঘাটি শুরু করে দিলাম। যদিও অভ্যাস আমার অনেক পুরনো। ধীরে ধীরে সবকিছু বেরিয়ে আসতে শুরু করল।তার ওপর নির্বাচনী প্রার্থীদের নিয়ে মানুষ একটু বেশি সমালোচনা করে থাকেন।
ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আমার খুব একটা বেগ পেতে হলো না। আমরা কয়েকজন শুধুমাত্র সেই মেয়েটির কথা ভাবতে লাগলাম। অদ্ভুত সুন্দর চেহারা। দেখলে মায়া মায়া লাগে। মিষ্টি তাদের আচার-আচরণ। আমরা যখন খাওয়া-দাওয়া করছিলাম তখনই বিষয়গুলো আজ করতে পারি।কিন্তু ভাবতে কষ্ট হচ্ছে তাদের ভাগ্যে এমন কি ঘটনা আছে যার জন্য তারা এখনো কুমারী? বিষয়টি নিয়ে আমার কৌতুহল বেড়েই চললো। আমি সব কিছু ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু মেয়ে তিনটি কে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। বড় মেয়েটির নাম ছিল সপ্না, মেজ মেয়ের নাম কলি, একদম ছোট মেয়েটির নাম ছিল, তামান্না।
নামগুলো যেমন সুন্দর মেয়েগুলো ঠিক তেমনি সুন্দর ছিল। বড় মেয়ের মেয়ের মুখে দিকে তাকালে মনে হতো বিয়ের বয়স তো অনেক আগেই পার হয়ে গিয়েছে। চেহারা দেখেই বোঝা যায় তার অতৃপ্ত বাসনা টা অনেক পুরনো। তবে চোখে-মুখে এখনও তার স্বপ্ন। তাকে দেখলেই সে কথা পরিষ্কার বোঝা যায়। দুপুর পেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। ভোটাররা ভোট কেন্দ্র থেকে যাওয়া আসা করছিল। তবে চিন্তার লিস্টটা এ বাড়িতে একটু বেশি দেখা যাচ্ছিল।
বিশেষ করে ভদ্রলোকের তিনটি মেয়ে তাদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। এতটাই টেন্স তারা ছিল, যে আমাকে গল্পটি লিখতে হল। এটি আমার কাছে গল্পের মতোই লেগেছে। তাই আমি এর নাম দিয়েছি, “বালুচরের অসমাপ্ত গল্প”গল্পটি এখনো শেষ হয়নি। গল্পের যে টুইস্ট গুলো আছে সেগুলো শুনলে খুব মজা পাবেন। আমার কাছে এ গল্পটি কে শুধু গল্প মনে হয়নি মনে হয়েছে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কোন ঘটনা। তাই বালুচরের অসমাপ্ত গল্প টি আর অসমাপ্ত রইল না। (পর্ব 2) অপেক্ষা করুন।
Writing by: Momin Sagar!