হলিউডের মারমার কাটকাট অ্যাকশন, থ্রিলার, রোমান্টিক, কমেডি কিংবা বিশাল বাজেটের সাইফাই সিনেমার বাইরেও যে বিশাল সিনেমার জগত আছে সেটা আমরা ক’জন জানি? তবে এটা স্বিকার করতে দ্বিধা নেই যে, বিশ্বের সবথেকে মেধাবি আর প্রতিভাবান পরিচালক, অভিনেতা কিংবা টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন হলিউডে। বিগ বাজেটের সিনেমাগুলো এখানেই নির্মিত হয়। কিন্তু বাজেট বা ভালো অভিনয় এগুলোই কি শুধু ভালো সিনেমার প্রধান শর্ত? চলুন আজ হলিউডের বাইরে এমন ৫টা মাস্টার পিস সিনেমার গল্প আপনাদের শোনাবো যার পরে আপনি নিজেই বলবেন হলিউডের লোকজন আসলে সিনেমাই বানাতে পারেনা। আর এতদিন কি বোকার স্বর্গেই না বাস করেছেন এই সিনেমাগুলো না দেখে।
৫। দক্ষিণ করিয়ার সিনেমা “ট্রেন টু বুসান” কে দিয়েই শুরু করা যাক। ট্রেন ভর্তি একদল মানুষ। সবাই যাচ্ছে বুসান শহরে। একেকজনের একেকটা উদ্দেশ্য। বাচ্চা একটা মেয়ে বাবার সঙ্গে যাচ্ছে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। গর্ভবতী একজন মহিলা তার স্বামীর সাথে ভ্রমণ করছেন। হাইস্কুলের একটা বেসবল টিম ও আছে সাথে। আছে ঘরছাড়া একজন আধপাগল মানুষ। সেই ট্রেনেই হলো জম্বি অ্যাটাক। যাকেই কামড় দিচ্ছে সেই পরিণত হচ্ছে জম্বিতে। জীবন বাঁচাতে হলে পৌঁছাতে হবে বুসানে। কিন্তু বুসানে কি যেতে পারবে ট্রেনের আরোহিরা? নাকি তার আগেই খতম হয়ে যাবে? এমন চমৎকার একটি গণ্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে “ট্রেন টু বুসান” নামের সিনেমাটি। এক কথায় বলতে গেলে মাস্টারপিস। থ্রিলার সিনেমা বানানোর দিক থেকে হলিউড যে কোরিয়ানদের কাছে শিশু সেটা যেন প্রমাণ করে দিয়েছে সিনেমাটি। অসাধারণ নির্মাণ আর দুর্দান্ত অ্যাকশন আর থ্রিলার মিলে অন্যন্য হয়ে উঠেছে “ট্রেন টু বুসান”।
৪। এবার এক ভারতীয় সিনেমার গল্প। ভারতীয় মানেই কিন্তু বলিউড নয়। “বাহুবালী” হচ্ছে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা। একটা দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা হয়েও পুরো ভারত কাঁপিয়েছে বাহুবালীর ২টা খণ্ড। ২য় টা তো পুরো ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমাই হয়ে গেছে। বিগ বাজেট, বড়-সড় স্টারকাস্ট আর কোটি কোটি রুপি খরচ করে দারুন সব লোকেশনে চমৎকার সেট বানিয়ে শুটিং করা হয়েছে সিনেমায়। বাহুবালি সিরিজ ভারতীয় সিনেমাকে অন্যরকম একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিয়েছে। যেসব ভিএফএক্স এর কাজ বাহুবালীতে দেখানো হয়েছে সেগুলো হলিউডেই দেখা যায়। বলিউডের জন্য লোকে একটাসময় ভারতীয় সিনেমাকে চিনত। এখন বাহুবালীর জন্য সেই যায়গাটা দখল করেছে দক্ষিণি সিনেমা।
৩। এবার এক বিখ্যাত বায়োপিকের কথা বলা যাক। অ্যাকশনের ভক্ত হলে ‘ইপম্যানের’ নাম শোনার কথা। চীনা এই ভদ্রলোক ছিলেন বিখ্যাত সুপারস্টার ব্রুস-লীর গুরু। ব্রুসলীকে মার্সাল আর্ট শিখিয়েছিলেন তিনি। সেই ইপম্যানের জীবনের গল্প নিয়েই তৈরী হয়েছে এই সিনেমা। সফলতার মুখ দেখায় একে একে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সিকুয়্যাল। শুধু অ্যাকশন সিনেমা ভাবলেই ভুল করবেন, “ইপম্যান” আসলে একটা অন্যরকম জীবনসংগ্রামের গল্প। তুখার অ্যাকশন আর চাইনিজ মার্শাল আর্টের পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাকে পড়ে সবকিছু হারিয়ে ফেলা একটা মানুষ কিভাবে ঘুরে দাড়ায় সেই গল্প বলা হয়েছে “ইপম্যানে”। সমাচলকরা দারুন প্রশাংসা করেছেন সিনেমাটার। চীনের নিয়ন্ত্রণে থেকেও হংকং এর সিনেমা যে কতদুর এগিয়ে গেছে সেটা বোঝার জন্য এক ‘ইপম্যান’ই যথেষ্ট।
২। এবার বলব এক ইন্দোনেশিয়ান অ্যাকশন ফিল্মের কথা। সন্ত্রাসী আর মাফিয়াদের ডেরায় হানা দিয়ে বেড়ানো সোয়াটের একটা দল আচমকায় এক মাফিয়া লিডারের আস্তানায় গিয়ে ফাঁদে পড়ল। সন্ত্রাসী আর মাফিয়াসের সেই আড্ডা থেকে প্রাণ নিয়ে ফেরার অসাধারণ এক গণ্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটা। অনেকের চোখেই মার্শাল আর্ট আর ফিজিক্যাল ভায়োলেট নিয়ে এযাবৎকালের সেরা সিনেমা হচ্ছে “দি রেইড”। এই সিনেমা মুক্তির পরে এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে হলিউডের বিখ্যাত সনি পিকচারস নেটওয়ার্ক চড়া দামে সিনেমাটার শর্ত কিনে নিয়েছিল। পরের কিস্তিটার প্রযোজনাও করেছিল তারা। ভাবুন সিনেমার শক্তি থাকলে স্বয়ং হলিউড ই এসে ধরা দেবে আপনার কাছে।
১। প্রিয় পাঠক, কোটি কোটি টাকা তো দিতে পারবোনা আপনাকে, তবে ক্রাইম থ্রিলালের ভক্ত হয়ে থাকলে “এলিট স্কোয়াড” সিরিজের সিনেমাটা যে কারো জন্য দেখা অনস্বিকার্য। বিশেষ করে “এলিট স্কোয়াড” দ্যা এনিমি উথিন সিনেমাটা তো দেখতেই হবে। তবে প্রথম সিনেমা “এলিট স্কোয়াড” না দেখলে গল্প বা চরিত্র বুঝতে একটু অসুবিধা হতে পারে। ব্রাজিলিয়ান এই সিনেমার গল্প এগিয়েছে রিয়োডি জিনিয়েরো শহরে। সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ পুলিশ বাহিনীর মারাত্মক অসাধারণ মিশন। তবে সিনেমাটা দেখার পর অনেকক্ষণ মাথা ঘোরাবে আপনার। অবাক হয়ে ভাববেন কী দেখলাম এতক্ষণ? ২ ঘণ্টা খরচ করে সিনেমাটা দেখলে সময়টা নষ্ট হবেনা সেই গ্যারান্টি দিচ্ছি। টানটান উত্তেজনা সিনেমার সাথে রয়েছে খুবই শক্তিশালি সিনেমার গল্প। ব্রাজিলের শুধু নেইমার, রোনালদোকে তো চিনলেই হবেনা? তাদের সিনেমাকেও তো চিনতে হবে?
বন্ধুরা আগামি দিনে হাজির হবো আরো ৫ টি মারাত্মক সিনেমা নিয়ে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সেই কামনা করছি।