সেই অপরাধী ছেলে আর মেয়ে
মিনু বাথরুমে থাকে। নিজের রুম যাচ্ছেতাই করে গোছানো। বাথটাবে বিছানা-পত্র, দৈনিক ব্যবহার্য মুটোমুটি সব খুব সুন্দর করে রাখা। তার বাবা মা তাকে এ নিয়ে কিছু বলে না। মেয়ের এসব দেখে মজাই পায়। ছোটবেলা থেকে যারা ওর বন্ধু তারাও কিছু বলে না। নতুন নতুন ভার্সিটিতে উঠার পর যারা তার সাথে বন্ধুত্ব করেছে তারা এ ব্যাপার কোনোভাবে মেনে নিচ্ছে না।
সে বাথরুম শিল্পী। বাথরুমে খুব ভাল গান করে। ওখানের ইকো, রিভার্ব কাজে লাগিয়ে গায়। বাথরুমের কোকিল, বের হলে কাক। আবার গান ছাড়া তার চলেও না। তাই এ ব্যবস্থা।
আজ এ মিনুর বিয়ে। সে বিয়েতে রাজী হত না। কারণ ছেলের বাসায় বাথটাব নেই। গান ছাড়া তার জীবন চলবে কিভাবে? তারপরও সে রাজী হয়েছে। কারণ একটাই, সিফাত।
সিফাতের সাথে পরিচয় পাত্র দেখার সময়। কতগুলো পাত্র যে সে বাদ দিয়েছে, হিসেব করতে বসলে দিন চলে যাবে। সিফাত আইনজীবি।
বয়স একটু বেশি হলেও তার নিজেকে উপস্থাপন করার প্রেমে পড়েছে মিনু। সিফাতেরও ভাল লেগেছে। মোবাইলের ওয়ালপেপার ছিল মিনুর ছবি। তবে তার বাবার খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে শেষে বিয়ে পর্যন্ত এ সম্পর্ক গড়ায় নি।
– বাবা তো কোনোভাবে বিয়েটা হতে দিবে না মনে হচ্ছে। তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাই?
– উহু। প্রেম করি নি। এখন এসে এগুলো কী বলছেন?
– তোমার সাথে এ ক’টা দিনেই আমার প্রেম হয়ে গেছে মিনু।
– প্রেম হলে বাবাকে বলেন। আর ফোন দিবেন না। এমনিতে কথা কম হচ্ছে না।
– কিসের জন্য কথা?
– এই যে আংটি পরাচ্ছেন না, শুধু দেখা করে যাচ্ছেন। একেকবার একেকজন দেখতে আসছেন।
– দেখো, আমার ফ্যামিলি এমন না। কাউকে অপছন্দ হলে দ্বিতীয়বার দেখতে আসি না। দ্বিতীয়বার বা তার বেশিবার দেখতে আসা তুমিই প্রথম। কিন্তু তোমার বেলায়ই এমন হচ্ছে। আমার ছোট বোনের ফেবারিট হয়ে গেছো তুমি, জানো?
– হয়েছে। আমার সাথে আর দেখা করতে আসবেন না।
– চলো না, পালাই। বাথরুমেই আমরা থাকবো তো।
– ধুর! এসব বলবেন না তো।
বিয়ের মঞ্চে যাওয়ার আগে এই দৃশ্যগুলো স্লাইডের মত ভেসে উঠছে মিনুর।
ছোট করে একটি নিঃশ্বাস ফেলল। আতিফ ছেলেটাকে তার খারাপ লাগেনি। এখন ভাড়া বাসায় থাকছে ওরা। আট/দশ মাস পরে তাদের নতুন বাড়ির কাজ শেষ হবে। বিয়েটাও বাড়ি বানানোর পরে করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মিনুর জোরাজুরিতে আর আটকানো গেল না।
মিনুর বিয়েতে ফটোগ্রাফির জন্য আমাকে আনা হয়েছে। সিফাত আমাকে যখন বলেছিল ওদের কথা, ওর যে মিনুর জন্য মায়া জন্মে গেছে বুঝেছিলাম। এরপর মিনুর কথা জিজ্ঞেস করলে ও চুপ হয়ে যেতো। কপাল কুঁচকে ফেলতো। আমিও আর বলি না তাই।
বিয়ের মৌসুম চলছে। সপ্তাহে তিন/চারদিন বিয়ের ইভেন্ট থাকে। সিফাতের ছবি তুলবো কি তুলবো না বুঝতে পারছি না। বেচারা এক কোণে চুপটি করে বসে আছে। ইভেন্ট আমি কাভার করছি সে জানে তো? আমার পার্টনারকে মোমেন্ট তোলার দায়িত্ব দিয়ে সিফাতকে লক্ষ্য করছি। স্টেজের দিকে একটু তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলছে। আবার তাকাচ্ছে, আবার চোখ নামাচ্ছে।
ওদিকে মিনু এক পলকে তাকিয়ে আছে। আতিফ তাকে চিয়ার আপ করার জন্য সস্তা জোক বলে, নিজেই হাসছে। মিনুর নজর সিফাতের দিকে। সিফাত এক লাফে উঠে বাইরে চলে গেলো। মিনু এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
সিফাত আর আসে নি। আমি বাইরে গিয়ে একটু চেক করে নিলাম। না, সে আশেপাশে নেই। ফোন দিবো? বেচারাকে আর বিব্রত না করি। ছবি তুলতে হবে। স্টেজে দেখি বৌ নাই। জামাই একা ভেলকার মত দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা নিচ্ছে। পার্টনারকে জিজ্ঞেসা করলাম কোথায় গেছে? সে বলল, ওয়াশরুমে নাকি।
মিনু ওয়াশরুমে কেন গেলো? সিফাতকে ফোন দিতে? নাকি কান্না করতে? গেসে হয়তো কোনো কাজে, আমার কী? আমার কাজ ছবি তোলা।
ও আচ্ছা, নাকি গান গাইতে? ওর তো আবার ওয়াশরুম ছাড়া গাওয়া হয় না।
আমার কৌতুহল বেড়েছে। জেন্টস আর লেডিস টয়লেট পাশাপাশি। আমি জেন্টস টয়লেটের সামনে গিয়ে কান পেতে শুনতে চাইছি, মিনুর গানের কন্ঠ।
না ব্যর্থ হই নি। মিনুর মুহুর্মুহু কন্ঠে গান শোনা যাচ্ছে।
“পোলা ও পোলা রে, তুই অপরাধীরে…”